ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের একটি অলাভজনক নেটওয়ার্ক। যেখানে তরুণ ও যুবসমাজ স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে সকলকে সামাজিক সচেতনতা ও দায়বদ্ধতার বার্তা প্রেরণ করে এবং প্রত্যেকের মূল্যবোধের পরিবর্তনে কাজ করে। সারাদেশে ৮ টি বিভাগের ৩২ টি জেলায় ৩৫,০০০ হাজারেরও বেশী স্বেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা, সম্ভাবনা, যেকোন দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে থাকে।
দেশকে সুরক্ষিত ও শৃঙ্খলিত রাখতে আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ও আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে অদ্যবধি ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান, অগ্নিকান্ড বিষয়ক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা, এবং নাগরিকদের জানমালের রক্ষক হিসেবে সর্বদা আত্মনিয়োজিত থাকার পাশাপাশি সকলের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করে আসছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে আমরা মনে করি, দেশ ও সমাজকে সুরক্ষিত, শৃঙ্খলিত এবং অগ্রগামী রাখতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি দেশের সচেতন নাগরিকদেরও নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করা এবং নিজস্ব কিছু দায়দায়িত্ব রয়েছে।
আর এই সচেতনতার চিন্তাধারা থেকেই ২৫শে এপ্রিল ২০১৯-এ, “জাগো ফাউন্ডেশন” তাদের ইয়ুথ উইং “ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ” কে সাথে নিয়ে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহায়তায় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাকলী, বনানী-১১, গুলশান-২, এবং নতুন বাজার এর গুরুত্বপূর্ণ ৪ টি সিগনালে “My Road, My Responsibility” (সচেতন হয়ে চলি, নিরাপদে বাঁচি) নামক “নিরাপদ সড়ক” বিষয়ক সচেতনতামূলক “ট্রাফিক এওয়্যারনেস ক্যাম্পিং” এর কার্যক্রম শুরু করেছে। আজ এই ৪ টি সিগনালে প্রায় ১৫০ জন ভলান্টিয়ার একত্রিত হয়ে কাজ করেছে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে।
প্রকল্পের শুরুতে গত ২৪ শে এপ্রিল ২০১৯, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসি গুলশান) কর্তৃক ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ সেচ্ছাসেবকদেরকে একটি কর্মশালার মাধ্যমে সড়ক আইন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
“নিরাপদ সড়ক” প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে পথচারী, এবং পরিবহন চালক ও শ্রমিকদেরকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সড়কে চলাচলের আইনকানুন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা এবং আইন মেনে চলতে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা। আশা করা যায়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ জনগনের মধ্যে শব্দ দূষণ ও সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, তারা ভবিষ্যতে সড়ক নীতি গুলো সঠিকভাবে মেনে চলবে এবং সড়ক পারাপারের জন্য ফুটওভার ব্রীজ ও জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করবে এবং সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনার হার কমবে।
বর্তমানে এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে এবং আগামী কয়েকমাস ব্যাপী এই প্রকল্পটি মাসে ২ বার করে ১৫ দিন পর পর ডিএমপি ও জাগো ভলান্টিয়ারদের যৌথ অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। তবে প্রকল্পের ইতিবাচক সফলতার ভিত্তিতে পরবর্তীতে প্রকল্পটি আরো বর্ধিত করার পরিকল্পনা করা হবে।
“নিরাপদ সড়ক” বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে, ভরদুপুরের প্রচণ্ড রোদের মাঝেও জাগোর ভলান্টিয়াররা ৪টি সিগনালে এই সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইং চালিয়ে গেছে। সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালনে ব্রত যুব সমাজের প্রতি সাধারণ জনগণ আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছে এবং প্রকল্পটি চালিয়ে যেতে উৎসাহ যুগিয়েছে। ইয়ং ভলান্টিয়াররা ডিএমপি’র সহায়তায় প্রবল উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছে। নিরাপত্তা কর্মী ও সাধারণ জনগণদের অনেকেই ভলান্টিয়ারদের খাবার পানীয় দিয়ে সহায়তা করেছে।
যদিও কেউ কেউ আবার কিছু নেতিবাচক উক্তি করে অসন্তোষও প্রকাশ করেছে। তবুও সার্বিকভাবে কার্যক্রমটি বেশ সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে, এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি পরিচালনা করতে গিয়ে একটি ব্যাপার সবাই উপলব্ধি করেছে যে দেশকে সুরক্ষিত ও শৃঙ্খলিত রাখতে আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা এবং তরুণ সমাজের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও অনেক বেশি সচেতন হয়ে চলতে হবে।
দেশব্যাপী ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) কার্যক্রম সঠিকভাবের পরিচালনার জন্য ২২ টি জেলায় ৭ জন করে স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধি আছে। এই নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকদের তত্ত্বাবধায়নে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ জেলা কার্যক্রম সুসম্পন্ন হয়ে থাকে।
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা গত বছর বাংলাদেশের ৮ টি বিভাগীয় শহরসহ সারাদেশে ২৩০ টি বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। যে কার্যক্রম গুলোর সবগুলোই ছিলো বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সাথে সম্পর্কিত। এই কার্যক্রম গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো “পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ”, “Go Green”, “আমার খাতায় বর্ণমালা”, স্বপ্নের শৈশব, “risk it or over bridge”, “নিরাপদ পারাপার”, “শহর আমার দায়িত্বও আমার”, “শ্রমিকদের অধিকার”, “মায়ের জন্য ভালোবাসা” ইত্যাদি।
২০১৮ সালে ভিবিডি ঢাকা জেলার স্বেচ্ছাসেবকরা ২৪ টি বিভিন্ন ধরনের সচেতনামূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং জরুরী অবস্থা মোকাবেলা সম্পর্কিত কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ঢাকা জেলার স্বেচ্ছাসেবকরা বৃহৎ পরিসরে “নিরাপদ সড়ক” সচেতনতামূলক কার্যক্রমটি শুরু করেছে।