একটি জাতির ইতিহাস তার শহীদদের রক্তে রঞ্জিত পথেই গড়ে ওঠে। সেই ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ – লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজন করেছিল একটি ব্যতিক্রমী এবং অন্তর ছুঁয়ে যাওয়া কর্মসূচি — ‘আলোর মশাল’। এই আয়োজনের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা শহীদদের আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে, সেই সাথে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রজ্বলিত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
২০২৫ সালের ৪ঠা আগস্ট, সন্ধ্যা ৭টায় লক্ষ্মীপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে নীরব শ্রদ্ধা, আলো এবং দেশের প্রতি ভালবাসায় ভরপুর এক আবেগঘন মিলনমেলায়। অনুষ্ঠান শুরু হয় শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে। তারপর একে একে জ্বালানো হয় শতাধিক মোমবাতি — যার আলোয় ঝলমলিয়ে উঠে শহীদ মিনারের চারপাশ। সেই আলো যেন হয়ে ওঠে শহীদদের স্মৃতির প্রতীক, আর তরুণদের মনে জাগিয়ে তোলে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের দীপ্তি।
এ আয়োজনে অংশ নেয় লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন ইউনিট থেকে আগত এক শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। প্রত্যেকের হাতে ছিল একটি করে মোমবাতি — যেন প্রতিটি আলো একটি করে কণ্ঠ, যারা বলছে: “আমরা ভুলিনি, আমরা ভুলবো না।” কর্মসূচি জুড়ে ছিল না কোনো অতিরঞ্জিত আয়োজন বা আনুষ্ঠানিকতা; বরং এর প্রতিটি মুহূর্তে ছিল নিঃশব্দ শ্রদ্ধা, সংবেদনশীলতা ও অন্তর থেকে উৎসারিত কৃতজ্ঞতা।
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ – লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ জানান, শহীদদের আত্মত্যাগের চেতনা শুধু অতীতের স্মরণ নয়, বরং তা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তারা বলেন, “আমাদের শহীদরা দেশের জন্য যা দিয়েছেন, তা আজকের তরুণদের পথ দেখায়। আমরা চাই এই চেতনা প্রতিটি যুবকের মনে জেগে উঠুক।”
তারা আরও বলেন, “ভবিষ্যৎ গঠনে যুবসমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের প্রয়োজন অতীতের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। এই আয়োজন সেই শিক্ষা গ্রহণেরই এক ক্ষুদ্র প্রয়াস।”
‘আলোর মশাল’ কর্মসূচি শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল একটি মূল্যবোধভিত্তিক অভিব্যক্তি — যেখানে তরুণেরা একসাথে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেছে তাঁদের পূর্বসূরিদের আত্মত্যাগকে, এবং একইসাথে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্বও স্বীকার করে নিয়েছে।
এই আয়োজনের মাধ্যমে ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ – লক্ষ্মীপুর জেলার স্বেচ্ছাসেবকরা দেখিয়ে দিল, প্রকৃত শ্রদ্ধা শুধু স্মরণে নয়, বরং তার চেতনায় নিজেকে গড়ে তোলাতেই নিহিত। এবং সেখানেই ‘আলোর মশাল’ হয়ে উঠেছে এক অনন্য অনুপ্রেরণা — অতীতের আলোয় বর্তমানকে আলোকিত করার সাহসী প্রয়াস।